কিভাবে নতুন ব্যবসা শুরু করবেন

কিভাবে নতুন ব্যবসা শুরু করবেনঃ ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ

আপনি অনেকদিন ধরেই হয়তো ভাবছেন একটা ব্যবসা করবেন, কিন্তু কিভাবে শুরু করবেন সেটা বুঝতে পারছেন না? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য।

অথবা, হয়তো ভাবছেন, আমারতো এই ব্যবসায়ের অভিজ্ঞতা নেই। তাহলে আমি কি পারবো? উত্তর হচ্ছে – হ্যা, আপনি পারবেন। যদি সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে শুরু করতে পারেন, আপনি অবশ্যই পারবেন। কিন্ত ব্যবসা শুরুর পূর্বে আপনাকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে।

তো, চলুন দেখে নেয়া যাক ব্যবসা শুরুর জন্য ৭ টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এবং কিভাবে নতুন ব্যবসা শুরু করবেন।

১. ব্যবসার আইডিয়া নির্ধারণ

ব্যবসায় সফল হওয়ার জন্য আইডিয়া খুঁজে বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীতে হাজারো লাভ জনক ব্যবসা আছে। কিন্তু সব ব্যবসা আপনার জন্য না। সবাই এক ব্যবসা একই ভাবে করে লাভবান হয়না। সেক্ষেত্রে আপনাকে আপনার জন্য উপযোগী একটি সুন্দর ব্যবসার আইডিয়া বের করতে হবে।

অনেকেই ব্যবসায় ব্যর্থ হয় শুধুমাত্র সঠিকভাবে সঠিক ব্যবসায়টি নির্ধারণ করতে না পারার কারনে।

আপনি হয়তো দেখলেন, অমুক ব্যবসায় লাভ অনেক বেশি অথবা আপনার অমুক বন্ধু এই ব্যবসা করে খুব লাভবান হচ্ছে। এটা দেখেই যদি আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন যে আপনিও এই ব্যবসা করবেন তাহলে ভুল করবেন। এটা দেখেই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আপনাকে ব্যবসায়টি আপনার জন্য উপযোগী কিনা সেটা আগে ভাবতে হবে।

তার জন্য প্রথমে আপনি কতগুলো ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে একটা তালিকা তৈরি করতে পারেন। এরপরে সেই তালিকা থেকে আইডিয়াগুলো মূল্যায়ন করে দেখতে হবে কোনটি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযোগী। এবং এটাই আপনার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

২. তুলনামূলক সুবিধাগুলো খুঁজে বের করুন

ব্যবসার ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে Competitive Advantage বা তুলনামূলক সুবিধা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা অনেকেই এটি নির্ধারণ করতে পারিনা বা এক্ষেত্রে ভুল করে থাকি। যার কারণে ব্যবসা টিকে থাকলেও খুব বেশি লাভজনক হয়না বা অনেক বাধাগ্রস্ত হয়।

কিন্তু শুরুতেই যদি আমরা এই বিষয়টি নির্ধারণ করে ফেলতে পারি, তাহলে ব্যবসার সফলতা অনেকাংশেই নিশ্চিত করা যায়।

অনেকেই মনে করেন সে তার প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে বেশি পরিশ্রম করে সফল হবে। কিন্ত এই ধারণা সঠিক নয়। এটা স্কুলের পরীক্ষা না যে বেশি পড়াশোনা করলেই বেশি নম্বর পাবেন। ব্যবসার ক্ষেত্রে এটা সম্পূর্ণ আলাদা। এক্ষেত্রে আপনি কারও সাথে সরাসরি প্রতিযোগিতায় নামতে পারবেন না। তাছাড়া পরীক্ষার মত ২ জনের প্রশ্ন ও এক হবেনা। ব্যবসার ধরন এক হলেও প্রত্যকের জন্য আলাদা আলাদা পরিস্থিতি হতে পারে।

তুলনামূলক সুবিধা বের করার জন্য আপনি তিনটি বিষয়ের দিকে নজর দিতে পারেন।

ক। একটি উদ্দীষ্ট বাজার বা Target Market খুজে বের করুন যেখানে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী ভাল অবস্থানে নেই অথবা কোনো একটি সুযোগ যেটি সে ব্যবহার করছেনা। যেমন, আপনার এলাকার সকল রেস্টুরেন্টে শুধু বিরিয়ানি পাওয়া যায়, কিন্তু কেউ মোরগ-পোলাও বিক্রি করেনা।

খ। আপনার সম্ভাব্য ক্রেতাদের কথা ভাবুন। নির্ধারণ করুন যে কোন কোন শ্রেণির মানুষ আপনার পণ্যটির ভোক্তা হতে পারে।

গ। এবারে সম্ভাব্য ভোক্তাদের সাথে যোগাযোগ করুন। এটা খুজে বের করুন, যে আপনি যেটাকে তুলনামূলক সুবিধা বলে মনে করছেন, সেটির প্রতি সম্ভাব্য ভোক্তাদের চাহিদা আছে কিনা। যদি দেখা যায় চাহিদা আছে, তাহলে এটাই আপনার তুলনামূলক সুবিধা।

৩. ব্যবসায়ের পরিকল্পনা

বলা হয়, পরিকল্পনা কাজের অর্ধেক। আর ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে এই কথাটি চরম সত্য। যদি ভাল একটি পরিকল্পনা/ একটা কর্মসূচি নির্ধারণ করা না থাকে, তাহলে অনেক এলোমেলোভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে অনেক ঝামেলায় পরতে হতে পারে।

ভাল একটি ব্যবসায় পরিকল্পনায় সকল সম্ভাব্য পরিস্থিতি, ভোক্তা, প্রতিযোগিতা, সুযোগ-সুবিধা, অসুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকে। একটা ভাল পরিকল্পনা হতে পারে আপনার ব্যবসা পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দু।

৪. ভাল একটি নাম নির্ধারণ

অনেকেই নিজের ব্যবসার জন্য যেমন তেমন একটা নাম দিয়ে থাকেন। আবার অনেকে নিজের নামেই ব্যবসার নামকরণ করে থাকেন। যেমন, মন্টু জুয়েলার্স। কিন্তু এটা প্রফেশনাল দেখায় না।

অনেক সময় ব্যবসায়ের ভাল একটি নাম ব্রান্ডিং এর জন্য অনেক বেশি সহায়তা করে থাকে।

৫. প্রোজেক্টেড আর্থিক বিবরণী

শুধুমাত্র সম্ভাব্য ক্রয়-বিক্রয়ের তালিকা ও আয়-ব্যায় নির্ধারণ করুন। সেখান থেকে আপনার কি পরিমাণ লাভ আসতে পারে সেটা বুঝার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে একটা বার্ষিক আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করে ফেলুন।

আপনি যখন একটি ব্যবসা করার জন্য নির্বাচন করে ফেলেছেন, এবার তার জন্য একটি সম্ভাব্য আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করুন। এজন্য আপনাকে একাউন্ট্যান্ট হতে হবেনা কিংবা একজন প্রফেশনাল নিয়োগ দিতে হবেনা।

৬. মার্কেটিং নেটওয়ার্ক

অনেকেই মনে করেন আমার পণ্য বা সেবা ভালো হলে, বাজারে চাহিদা থাকলে মার্কেটিং কোনো ব্যপার না। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। নতুন কিংবা পুরাতন, যেকোনো ব্যবসার জন্য মার্কেটিং একটি কঠিন কাজ।

তাই শুরুতেই মার্কেটিং শুরু করে দিন। আপনি কেমন ধরনের সেবা বা পণ্য বাজারে নিয়ে আসছেন, তা সম্পর্কে এখন থেকেই মানুষকে জানান। সম্ভাব্য ক্রেতাদের মধ্যে আগ্রহ গড়ে তুলুন।

সৌভাগ্যক্রমে, ববর্তমানে অনেক সুবিধা আছে যা ব্যবহার করে আপনি ফ্রি-তে বা স্বল্প খরচে মার্কেটিং করতে পারবেন। যেমন ফেইসবুকে একটা পেইজ খুলে ফেলতে পারেন বা ফ্রিতে ওয়েবসাইট ও বানানো যায়।

জানেন তো, প্রচারেই প্রসার। তাই মার্কেটিং ব্যাপারটাকে কোনোভাবেই হেলাফেলা করা চলবেনা।

৭। অর্থায়ন করুন এবং ব্যবসা শুরু করুন

আপনার কাছে হয়তো বিনিয়োগ করার মত যথেষ্ট অর্থ আছে। সেক্ষেত্রে আপনি উপরের ৬ টি ধাপ অনুসরণ করে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করে দিন।

আর যদি যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ না থাকে সেক্ষেত্রে অর্থায়ন করুন। ছোট খাট ব্যবসার জন্য আত্নীয় স্বজনের কিংবা বন্ধুদের থেকে ধার নিতে পারেন। অথবা একটা ঋণ নিতে পারেন। তবে ছোট ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে ঋণ না নিয়ে পারলেই ভাল।

সর্বশেষ কথা হচ্ছে শুরু করুন। আর শিখতে থাকুন। আপনার প্রথম প্রজেক্টে যদি ব্যার্থও হন, বিশ্বাস করুন, যে অভিজ্ঞতা আপনি অর্জনে করবেন তা কোনো বিবিএ/এমবিএ ডিগ্রি করে পাবেন না।

সর্বপরি শেখার মানষিকতা থাকতে হবে। আপনি যতই শিখবেন, তত বেশি সফলতা পাবেন। ব্যবসা শুরু করেই বসে থাকা যাবেনা। প্রতিদিন নতুন নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করতে হবে। মানুষের রুচি-চাহিদা প্রতিদিন পরিবর্তন হয়। তাদের প্রয়োজন বুঝার চেষ্টা করতে হবে এবং সেভাবে ব্যবসাকে আপডেট করতে হবে।

আমিও আপনাদের মতই একজন যে প্রতিদিন শেখার চেষ্টা করছি। সেই হিসেবে লেখায় ভুল থাকতে পারে। ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সেইসাথে কমেন্টের মাধ্যমে জানিয়ে দিবেন যাতে করে শিখতে পারি। লেখাটি আপনার ভাল লাগলে অবশই শেয়ার করবেন। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন। ধন্যবাদ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *